PhonePe Blogs Main Featured Image

Trust & Safety

একজন “মানি মিউলে” পরিণত হবেন না: এই ধরনের আর্থিক প্রতারণা এড়াতে আপনার জন্য নির্দেশিকা

PhonePe Regional|4 min read|01 March, 2025

URL copied to clipboard

কেউ যদি আপনাকে প্রতি সপ্তাহে Rs.500 দেবে বলে, স্রেফ আপনার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে পেমেন্ট গ্রহণ করা এবং তা ফরোয়ার্ড করার জন্য? প্রস্তাবটি শুনতে অবিশ্বাস্য লাগছে তো? কারণ এটি একেবারেই বিশ্বাসযোগ্য নয় – এবং এটি সাধারণ মানুষকে শিকার বানিয়ে সবচেয়ে দ্রুত বাড়তে থাকা আর্থিক প্রতারণাগুলির মধ্যে একটি।

প্রতারকরা টাকা পাচার বা অন্যান্য বেআইনি কাজ সম্পন্ন করার জন্য “মিউল অ্যাকাউন্ট” ব্যবহার করে, কিন্তু অপরাধীরা নিজেদের এতে জড়ায় না। আমরা এই ব্লগে জানবো “মিউল অ্যাকাউন্ট” কী, তা কীভাবে কাজ করে এবং কেন সেগুলি লোকজন আর বিভিন্ন সংস্থার জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ।

“মানি মিউল” কী?

“মানি মিউল” সেইসব ব্যক্তি যারা কোনও প্রতারণামূলক বা বেআইনি কাজে অংশ নিয়ে অপরের হয়ে একটি অ্যাকাউন্ট থেকে অন্য অ্যাকাউন্টে টাকা ট্রান্সফার বা “মিউল” করেন (ভারবাহী পশুর মতো)। একজন “মানি মিউল” পারিশ্রমিকের বিনিময়ে বা কোনও মিথ্যা পুরস্কারের আশ্বাস পেয়ে নিজের অ্যাকাউন্টে ফান্ডগুলি গ্রহণ করেন এবং তা অন্য অ্যাকাউন্টে ট্রান্সফার করেন। যদিও কিছু মানুষ স্বেচ্ছায় এই ফন্দিতে অংশগ্রহণ করেন, তবে অনেকেই প্রতারিত হয়ে এই অপরাধমূলক কাজে জড়িয়ে পড়েন।

বিবেচনা করুন: আপনি ফাইন্যান্স অ্যাসিস্ট্যান্ট পদে একটি চাকরির প্রস্তাব পেলেন যেটি আসল বলে মনে হচ্ছে। কাজটি বেশ সহজ লাগছে – একটি কোম্পানিকে আন্তর্জাতিক পেমেন্ট প্রসেস করতে সাহায্য করা। আপনি যেটা বুঝতে পারছেন না তা হল আপনি একজন “মানি মিউল” হয়ে উঠেছেন এবং আপনি একটি জটিল টাকা পাচারকারী চক্রের অংশ।

“মিউল অ্যাকাউন্টগুলি” সাধারণত টাকা পাচারের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকে, যেখানে চুরি করা ফান্ডের উৎস গোপন রাখার জন্য সেগুলি একাধিক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে পাঠানো হয়, যার ফলে কর্তৃপক্ষের দ্বারা লেনদেনগুলি অপরাধমূলক কার্যকলাপ হিসেবে চিহ্নিত করা কঠিন হয়ে পড়ে। এই অ্যাকাউন্টগুলি ফিশিং প্রতারণা, লটারি জালিয়াতি, বা ইনভেস্টমেন্ট জালিয়াতি সহ বিভিন্ন ধরনের প্রতারণায় ব্যবহার করা হতে পারে, যেখানে শিকারদের এই অ্যাকাউন্টগুলিতে টাকা পাঠানোর জন্য প্রতারিত করা হয়।

প্রতারকরা কীভাবে তাদের নেটওয়ার্ক তৈরি করে

“মানি মিউল” নেটওয়ার্কগুলি এমন একটি কর্মকাণ্ড যেখানে অপরাধীরা তাদের গোপনীয়তা বজায় রেখে অত্যন্ত সাবধানতার সঙ্গে তাদের শিকার এবং “মিউলের” মধ্যে লেনদেন পরিচালনা করে। এর নেতৃত্বে থাকে “মিউল নিয়ন্ত্রক” বা “নিয়োগকারী” যারা প্রতারণার এই জটিল জালগুলির মধ্যে সমন্বয় স্থাপন করে।

“মিউল নিয়ন্ত্রকরা” কীভাবে কাজ করে?

1. নিয়োগ: প্রতারকরা সরাসরি যোগাযোগ, বা “সহজে রোজগারের” বিজ্ঞাপন, বা জাল চাকরির সুযোগ, অথবা সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে সম্ভাব্য “মিউলদের” শনাক্ত করে। আপাতদৃষ্টিতে এগুলোকে বৈধ সুযোগ বলে মনে হলেও এগুলো মানুষকে “মিউল” বানিয়ে ব্যবহার করার ছক।

2. ফান্ড সংগ্রহ: “মিউল অ্যাকাউন্ট” তৈরি হয়ে গেলে, ফান্ডগুলি “মিউলের” অ্যাকাউন্টে জমা করা হয় – যার উৎস প্রায়শই প্রতারণা, জালিয়াতি বা চোরাই ক্রেডিট কার্ড। এটি ওয়্যার ট্রান্সফার, বা অনলাইন পেমেন্টের মাধ্যম ব্যবহার করে সম্পন্ন হতে পারে।

3. টাকা চালাচালি: প্রতারক তারপর “মিউলকে” অন্য অ্যাকাউন্টে বা ক্রিপ্টোকারেন্সি ওয়ালেটে টাকা ট্রান্সফার করার নির্দেশ দিতে পারে, প্রায়শই আন্তর্জাতিক সীমানার বাইরে। কিছু ক্ষেত্রে, “মিউলদের” বাধ্য করা হয় টাকা বিদেশী মুদ্রায় রূপান্তর করতে বা জিনিসপত্র কিনে অন্য লোকেশনে পাঠাতে।

4. গতিবিধি লুকানো: অপরাধীরা এক সারি “মিউল অ্যাকাউন্টের” মাধ্যমে টাকা পাঠিয়ে তদন্তকারীদের পক্ষে অবৈধ ফান্ডগুলিকে চিহ্নিত করা কঠিন করে তোলে। এর উদ্দেশ্য আর্থিক লেনদেনের একটি বিভ্রান্তিকর গতিপথ তৈরি করা যাতে টাকার উৎস এবং গন্তব্য শনাক্ত করতে সমস্যা হয়।

প্রতারকরা কীভাবে “মিউলদের”  নিয়োগ করে?

প্রতারকরা প্রায়শই আর্থিকভাবে দুর্বল বা টাকা উপার্জনের সহজ উপায় খুঁজছেন এমন লোকদের শিকার বানায়। কয়েকটি  সাধারণ নিয়োগ কৌশলের মধ্যে রয়েছে:

  • জাল চাকরির প্রস্তাব: প্রতারকরা প্রায়শই জাল চাকরির বিজ্ঞাপন দেয়, বিশেষ করে দূরে বসে বা বাড়ি থেকে কাজ করার সুযোগ হিসেবে। এই চাকরিগুলি নামমাত্র পরিশ্রমে সহজ রোজগার  বা কমিশন-ভিত্তিক আয়ের প্রতিশ্রুতি দেয়। শিকার এটি গ্রহণ করার পরে, তাদের ফান্ড গ্রহণ এবং ট্রান্সফার করার জন্য একটি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খুলতে বলা হয়।
  • ইনভেস্টমেন্ট এবং লটারি প্রতারণা: প্রতারকরা তাদের শিকারদের বিশ্বাস করায় যে তারা একটি লটারি জিতেছেন বা ইনভেস্টমেন্টের সুযোগ খুঁজে পেয়েছেন। তারপরে শিকারকে ফান্ড গ্রহণের জন্য একটি অ্যাকাউন্ট তৈরি করার নির্দেশ দেওয়া হয়, যেটি পরে প্রতারণামূলক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হয়।
  • জরুরি পরিস্থিতি: কিছু প্রতারক ভয় এবং তাড়াহুড়োকে কাজে লাগিয়ে দাবি করে যে শিকারের কাছে তাদের টাকা পাওনা আছে এবং তারা যদি সহযোগিতা না করেন ও ফান্ড ট্রান্সফারে সহায়তা না করেন তবে তাদের গুরুতর পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হবে।

“মিউল” হওয়ার ঝুঁকি এবং পরিণতি 

কিছু মানুষ স্বেচ্ছায় “মানি মিউল” হতে রাজি হলেও, অনেকে অনিচ্ছাকৃতভাবে জড়িয়ে পড়েন। তবে, উদ্দেশ্য যাই হোক না কেন, “মিউল অ্যাকাউন্টের” সঙ্গে যুক্ত থাকলে গুরুতর পরিণতি হতে পারে:

1. আইনি পরিণতি

  • টাকা পাচার এবং জালিয়াতির জন্য ফৌজদারি অভিযোগ
  • সম্ভাব্য কারাদণ্ড
  • ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট বন্ধ হওয়া এবং আর্থিক পরিষেবায় বিধিনিষেধ

2. আর্থিক ক্ষতি

  •  নিজস্ব ফান্ডের ক্ষতি
  • আইনি লড়াইয়ের খরচ
  •  সম্ভাব্য জরিমানা এবং গুনাগার
  • ক্রেডিট রেটিংয়ে দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতি

কীভাবে “মানি মিউল” প্রতারণা এড়ানো যায়

  •  অনলাইনে অজানা ব্যক্তিদের সঙ্গে যোগাযোগ এড়িয়ে চলুন
  • অন্য কারও হয়ে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খুলবেন না
  • আপনার ডেবিট কার্ড, পাসবুক বা মোবাইল ব্যাঙ্কিং অ্যাপের পাসওয়ার্ড কাউকে জানাবেন না
  •  ঘন-ঘন আপনার মোবাইল ব্যাঙ্কিং পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করুন
  •  এমন চাকরির অফার গ্রহণ করবেন না যার জন্য অন্য অজানা অ্যাকাউন্টে টাকা ট্রান্সফার করতে হয়
  • আপনার অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে অন্যদের টাকা গ্রহণ বা ট্রান্সফার করতে দেবেন না
  • এমন কোনও পুরস্কারের টাকা গ্রহণ করবেন না যার জন্য আপনাকে এর একটি অংশ অন্য কোথাও ট্রান্সফার করতে হবে
  • কোনও OTP বা লগইন তথ্য শেয়ার করবেন না যেমন CVV, পাসওয়ার্ড ইত্যাদি।
  •  অবাস্তব অফার, সস্তা ডিল এবং ছাড় থেকে সাবধান থাকুন।
  • নিয়মিত আপনার অ্যাকাউন্টের লেনদেন চেক করুন এবং যে কোনও অস্বাভাবিক কার্যকলাপ অবিলম্বে ব্যাঙ্কের কাছে রিপোর্ট করুন।
  • সাম্প্রতিক আপডেটের জন্য SMS/ইমেল/IVR-এর মাধ্যমে ব্যাঙ্ক থেকে আসা নির্দেশ অনুসরণ করুন।

আপনার যদি সন্দেহ হয় যে আপনি “মানি মিউল” প্রতারণার অংশ, তাহলে PhonePe-তে কীভাবে সমস্যাটি জানাবেন

যদি আপনি PhonePe-এর মাধ্যমে কোনও জালিয়াত দ্বারা প্রতারিত হন, তাহলে আপনি অবিলম্বে নিম্নলিখিত উপায়ে সমস্যাটি জানাতে পারেন:

  1. PhonePe অ্যাপ: Help/সহায়তা বিভাগে যান এবং “লেনদেন বিষয়ক কোনও সমস্যা“ নামক বিকল্পের অধীনে সমস্যাটি জানান।
  2. PhonePe গ্রাহক সহায়তা নম্বর: আপনি একটি সমস্যা জানাতে PhonePe গ্রাহক সহায়তায় 80–68727374 / 022–68727374 নম্বরে কল করতে পারেন, যার পরে গ্রাহক সহায়তা প্রতিনিধি একটি টিকিট তৈরি করবেন এবং আপনার সমস্যা সমাধানে সহায়তা করবেন।
  3. ওয়েবফর্ম জমা দেওয়া: আপনি PhonePe এর ওয়েবফর্ম, https://support.phonepe.com/ ব্যবহার করেও একটি টিকিট সংগ্রহ করতে পারেন
  4. সোশ্যাল মিডিয়া: আপনি PhonePe এর স্যোশ্যাল মিডিয়া হ্যান্ডেলের মাধ্যমে প্রতারণামূলক ঘটনাগুলির বিষয়ে অভিযোগ জানাতে পারেন

টুইটার — https://twitter.com/PhonePeSupport

ফেসবুক — https://www.facebook.com/OfficialPhonePe

5. অভিযোগ: কোনও চালু অভিযোগের বিষয়ে রিপোর্ট করতে, আপনি https://grievance.phonepe.com/ তে লগইন করতে পারেন এবং আগে থেকে সংগ্রহ করা টিকিট আইডি টি শেয়ার করতে পারেন।

6. সাইবার সেল: সবশেষে, আপনি নিকটবর্তী সাইবার ক্রাইম সেলে প্রতারণার অভিযোগ জানাতে পারেন অথবা https://www.cybercrime.gov.in/ এ অনলাইনে অভিযোগ রেজিস্টার করতে পারেন অথবা সাইবার ক্রাইম সেল হেল্পলাইনে 1930 নম্বরে যোগাযোগ করতে পারেন।

7. টেলিযোগাযোগ দপ্তর: যদি কোনও ডিজিটাল অপরাধ না ঘটে থাকে, কিন্তু আপনার সন্দেহ হয়, তবে তা অবশ্যই রিপোর্ট করতে ভুলবেন না। টেলিযোগাযোগ দপ্তর তাদের “সঞ্চার সাথী” পোর্টালে (sancharsaathi.gov.in) “চক্ষু” নামে একটি সুবিধা চালু করেছে, যেখানে যে কেউ সন্দেহজনক মেসেজ, কল এবং WhatsApp অ্যাকাউন্টগুলিকে প্রতারণামূলক হিসেবে রিপোর্ট করতে পারেন।

গুরুত্বপূর্ণ রিমাইন্ডার — PhonePe কখনওই গোপনীয় বা ব্যক্তিগত বিবরণ জিজ্ঞাসা করে না। PhonePe থেকে আসা হিসেবে ক্লেম করা সব ইমেল এড়িয়ে যান, যদি সেগুলি phonepe.com ডোমেন থেকে করা না হয়। আপনি যদি প্রতারণার সন্দেহ করেন, অনুগ্রহ করে অবিলম্বে কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করুন।

Keep Reading